জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের নদী ভাঙ্গন রোধ ও রাস্তা সংস্কারের দাবি
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫ ১৭:৩০
ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নদী ভাঙ্গন রোধ ও রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ায় বিএনপির পূর্ব ঘোষিত ‘লং মার্চ’ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষা করবো, কিছুদিনের মধ্যে যদি দৃশ্যমান কোন প্রক্রিয়া না দেখি তবে আবার কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবো।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় সিলেট প্রেসক্লাবে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের নদী ভাঙ্গন রোধ ও রাস্তা সংস্কারের দাবি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) এ কথা বলেন।
চাকসু মামুন বলেন, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নদী ভাঙ্গন রোধ ও রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গত ৬ মে নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে এ দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। একই সাথে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ওই সময় আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম দীর্ঘ এক মাসের মধ্যে যদি দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয় তখন বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাবে। প্রয়োজনে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে ১৮ জুন লং মার্চ করে সিলেট এলজিইডি ভবন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। এর মধ্যে প্রশাসনের কিছুটা টনক নড়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পা উ বো) জকিগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া জকিগঞ্জ-কানাইঘাটবাসীর প্রাণের দাবি রাস্তা মেরামতের বিষয়টি এলজিইডি সিলেট অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক মো. আজহারুল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়েছেন। তবে কর্মকর্তারা ফান্ডে টাকা সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে সময় কিছুটা সময় চান। পাউবো ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের এমন আশ্বাসে আগামীকাল ১৮ জুনের লং মার্চ ও এলজিইডি ভবন ঘেরাও কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে গত ১৭ বছরে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত এ অঞ্চলের মানুষ। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে উন্নয়নের দাবি জানালেও ফ্যাসিস্ট সরকারের অব্যাহত দমন পীড়নের কারণে রাজপথে সোচ্চার হতে পারিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রæত সড়ক মেরামত ও নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে।
চাকসু মামুন আরও বলেন, জকিগঞ্জ উপজেলার শেওলা-জকিগঞ্জ, কালিগঞ্জ-জকিগঞ্জ, আটগ্রাম-জকিগঞ্জ রাস্তা, কানাইঘাটের বুরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-দরবস্ত, গাছবাড়ি-হরিপুর রাস্তা দ্রæত মেরামতের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের কর্মকর্তাদের পরামর্শে একটি আলাদা প্রজেক্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) এর তত্ত¡াবধানে কাজগুলো বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া সিলেটের দৃষ্টিনন্দন একটি জায়গা হলো কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন। প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য্য এখানে পুঞ্জিভ‚ত করে রেখেছে। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এই অঞ্চলটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সুরমা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে থানা সদরের সাথে এ অঞ্চলের সংযোগ স্থপন করতে পারলে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে। একাজটিও ওই প্রজেক্টের অধীনে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলজিইডি কর্মকর্তাদের সাথে এ ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি নেতা মামুন বলেন, ১০/১২দিন আগে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে যে বন্যা হয়েছিল, এ বন্যায় জকিগঞ্জে খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে। কুশিয়ারা ডাইকের বেশ কয়েকটি জায়গা ভেঙ্গে আবার কোথাও ডাইকের উপর দিয়ে বন্যার পানি ঢুকেছে। এতে মানুষের বসত ভিটা, ফসলী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যায়। এ অবস্থায় তাৎক্ষনিক স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মাটির বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করে। আমাদের দলের লোকজন পকেটের টাকা খরচ করে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুন রশীদ, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়মন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবিদুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ওয়েছ আহমদ, আব্দুল মালিক চৌধুরী(ইউপি চেয়ারম্যান), আব্দুন নূর, সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান পারভেজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদ বাঙ্গালী, নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ আবুল বাশার, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
চায়ের দেশ থেকে আরো পড়ুন